নামাজের নিয়ম ও সূরা

আল্লাহ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। দিনের শুরু যে নামাজ দিয়ে হয় সেটি ফজরের নামাজ। প্রতি ওয়াক্তের নামাজের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নামাজের নিয়ম ও সূরা

যদি এই লেখায় উল্লেখ থাকে বা যা করার নিয়ম আছে কিন্তু এই লেখায় উল্লেখ করা না হয়ে থাকে, তবে তা কেন করা যাবেনা বা কেন করতে হবে তা যুক্তি,রেফারেন্স সহ তুলে ধরে আমাদের জানানোর সুযোগ করে দিবেন।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও সূরা

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও সূরা
নামাজের নিয়ম ও সূরা

জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নামাজ শুরুর পূর্বেই এই দোয়া পড়তে হয়-“ইন্নি ওয়াজ্জাহ তু ওয়াজ্ হিয়া লিল্লাজি, ফাত্বরস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল্ আরদ্বঅ হানি-ফাওঁ ওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকী-ন”।
অর্থ-নিশ্চই আমি তারই দিকে মুখ করলাম, যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং বাস্তবিকই আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই/নামাজের নিয়ম ও সূরা ।


সানা পাঠঃ নিয়ত করে হাত বাধার পর এই দোয়া পড়তে হয়-“সুবহা-না কাল্লা-হুম্মা ওয়া বিহাম্ দিকা ওয়াতাবারঅ কাস্ মুকা ওয়াতা’ আ-লা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলা-হা গাইরুক”।
অর্থ- হে আল্লাহ ! আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার মহিমা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বরকতময়, আপনার মাহাত্ম্য সর্বোচ্চ এবং আপনি ভিন্ন কেহই ইবাদতের যোগ্য নয় ।

তাআ’উজ পাঠাঃ সানার পর পড়তে হয়-“আউযুবিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম”।
অর্থ- বিতারিত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি ।


তাসমিয়া পাঠঃ তাআ’উজ পাঠের পর পড়তে হয়-“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”।
অর্থ- পরম দাতা ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি ।


অতঃপর সূরা ফাতিহা পাঠ করে কোরআনের যে কোন স্থান হতে কয়েক আয়াত পাঠ করতে হয়। আয়াত বা সূরা পাঠের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা উত্তম।


ফাতিহা পাঠ ও কোরআনের আয়াত বা অপর সূরা পাঠের পর রুকুতে যেতে হয়।
রুকুর তাসবীহঃ রুকুতে পাঠ করতে হয়-“সুবহা-না রব্ বি ইঃয়াল্ আ’জ্বীম।
অর্থ-মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহাত্মতা ঘোষণা করছি ।/নামাজের নিয়ম ও সূরা


তাসমীঃ রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় পড়তে হয়-“সামি আল্লা হুলিমান হামিদাহ”।
অর্থ-প্রশংসাকারীর প্রশংসা আল্লাহ শোনেন ।

তাহমীদঃ রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়-“রাব্বানা লাকাল হামদ”। 
অর্থ- হে আমার প্রভু, সমস্ত প্রশংসা আপনারই 

সিজদার তাসবীহঃ সিজদায় পড়তে হয়-“সুবহা-না রাব্বিয়াল আ’লা”। 
অর্থ- আমার প্রতিপালক যিনি সর্বশ্রেষ্ট, তারই পবিত্রতা বর্ণনা করছি।


দু’সিজদার মাঝখানে পড়ার দোয়াঃ দুই সিজদার মাঝখানে সামান্য বিরতি দিতে হয়, তখন পড়তে হয়”-আল্লাহু ম্মাগ ফিরলী ওয়ার হামনি ওয়ার যুক্কনী”।
অর্থ- হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে রহম করুন, আমাকে রিজিক দিন /নামাজের নিয়ম ও সূরা


এইভাবে এক রাকাত নামাজ শেষ হল।
অতঃপর পুনরায় দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় রাকাত শুরু করতে হয়। দ্বিতীয় রাকাতে সানা পাঠ করতে হয় না। সানার পরবর্তী নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।

দুই রাকাত নামাজ শেষে বসতে হয়।
দুই রাকাত পর বৈঠকঃ বৈঠকে যা পড়তে হয়-
তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতুঃ তাশাহুদে পড়তে হয়-“আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি,  ওয়াছ ছালা-ওয়াতু, ওয়াত-তাইয়্যিবা তু, আচ্ছালা মু আ’লাইকা, আইয়্যুহান নাবিয়্যু, ওয়ারাহ মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আচ্ছালামু আলাইনা, ওয়া আ’লা ইবাদিল্লা হিছ-ছা লিহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু

দরুদ শরীফঃ তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতুর পর পড়তে হয়-“আল্লহুম্মা ছাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ’লা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আ’লা ইব্রহীমা ওয়া আ’লা আ-লি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজী-দ্ ।আল্লাহুম্মা বারিক্ আ’লা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আ’লা আ’লি মুহাম্মাদিন,  কামা বা-রাকতা আ’লা ইব্রহীমা ওয়া আ’লা আ’লি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ ।

দোয়ায়ে মাসূরাঃ দরুদ শরীফ পাঠের পর পড়তে হয়-“আল্লা-হুম্মা ইন্নী জ্বলামতু নাফসী জুলমান কাছীরও ওয়ালা ইয়াগফিরু যুনূবা ইল্লা আনতা ফাগ্ ফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম।


যদি নামাজ দুই রাকাতের হয় তবে দুই রাকাতের বৈঠকে তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ, দোয়ায়ে মাসূরা পাঠের পর সালাম ফিরাতে হবে।

যদি নামজ তিন রাকাতের হয় তবে দুই রাকাত নামাজ শেষে অর্থাৎ দুই রাকাতের বৈঠকে শুধু তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। দাঁড়িয়ে সানার পরবর্তী অংশ পাঠের মাধ্যমে প্রথম রাকাতের নিয়মে আরো এক রাকাত নামাজ আদায় করে তৃতীয় রাকাত সম্পন্ন করতে হবে। তৃতীয় রাকাতের শেষে বসতে হবে। শেষ বৈঠকে বসে তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ শরীফ ও দোয়া মাসূরা পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে নিতে হবে।

নামাজ যদি চার রাকাতের হয় তবে দুই রাকাত নামাজ শেষে অর্থাৎ দুই রাকাতের বৈঠকে শুধু তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। দাঁড়িয়ে সানার পরবর্তী অংশ পাঠের মাধ্যমে প্রথম রাকাতের নিয়মে আরো এক রাকাত নামাজ আদায় করে তৃতীয় রাকাত নামাজ সম্পন্ন করতে হবে। তৃতীয় রাকাত শেষে না বসে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। পুনরায় সানার পরবর্তী অংশ পাঠের মাধ্যমে আরো এক রাকাত নামাজ আদায় করে চতুর্থ রাকাত সম্পন্ন করতে হবে। চতুর্থ রাকাতের পর বৈঠকে অর্থাৎ শেষ বৈঠকে তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদ শরীফ ও দোয়া মাসূরা পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে নিতে হবে।

বেতের নামাজের নিয়ম ও সূরা

নিয়ত মানে মনের সংকল্প। প্রায় সকলেই নিয়ত সম্পর্কে যে ভুলটি করে থাকি সেটি হল। নিয়তের ক্ষেত্রে আমরা আরবি নিয়ত কে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। মূলত বিষয়টি এরকম নয় নিয়ত নিজ মাতৃভাষায় করাটা অনেক ক্ষেত্রে আরবি থেকে উত্তম।
কেননা রাসুলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম হাদিসে পাকের মধ্যে এরশাদ করেন আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন বিজোড় এবং তিনি বিজোড় নামাজকে পছন্দ করেন। অতএব তোমরা বিজোড় সালাত (বিতর সালাত) আদায় কর।

বিতর নামাজের নিয়ত/নামাজের নিয়ম ও সূরা

নিয়ত মানে মনের সংকল্প। প্রায় সকলেই নিয়ত সম্পর্কে যে ভুলটি করে থাকি সেটি হল। নিয়তের ক্ষেত্রে আমরা আরবি নিয়ত কে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। মূলত বিষয়টি এরকম নয় নিয়ত নিজ মাতৃভাষায় করাটা অনেক ক্ষেত্রে আরবি থেকে উত্তম।

কেননা আরবি গ্রামারের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান আমাদের না থাকায় নিয়তের মধ্যে অনেক ভুল করে থাকি। কিন্তু দেখুন নিজ ভাষায় যখন নিয়ত করবেন তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বিতর নামাজের বাংলা নিয়ত

বিতর নামাজের বাংলা নিয়ত
নামাজের নিয়ম ও সূরা

ভেতর নামাজের নিয়ত ফরজ নামাজের ন্যায় ৩ ভাবে হতে পারে তাই এই ভিন্ন পরিস্থিতিতে আপনাকে ভিন্নভাবে নিয়ত বাঁধতে হবে।

1.ইমামের পিছনে নামাজ পড়লে

আমি কেবলামুখী হয়ে ইমামের পেছনে ৩ রাকাত বিতর নামাজ আদায় করছি করছি।

2.একাকী হলে

একাকী হলে

তখন নিয়ত টি হবে কিছুটা এরকম আমি কেবলামুখী হয়ে ৩ রাকাত বিতর নামাজ আদায় করছি

3.ইমাম হয়ে নামাজ পড়ালে

নিয়তের ধরন হবে কিছুটা এরকম কেবলামুখী হয়ে ৩ রাকাত বিতর নামাজ পড়াচ্ছি।

বেতের নামাজের আরবি নিয়ত

নাওয়াইতুয়ান য়া ওসল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা সালাসা রাকায়াতি সালাতিল ওয়িতরি ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহানইইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

বেতের নামাজের নিয়ম

অন্যান্য ফরজ নামাজের ন্যায় দুই রাকাআত নামাজ পড়ে প্রথম বৈঠকে বসে তাশাহহুদ পড়া। তারপর তৃতীয় রাকআত পড়ার জন্য উঠে সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য কোনো সুরা বা আয়াত মিলানো। কিরাআত (সুরা বা অন্য আয়াত মিলানোর পর) শেষ করার পর তাকবির বলে দু’হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে তাকবিরে তাহরিমার মতো হাত বাঁধতে হয়। তারপর নিঃশব্দে দোয়া কুনুত পড়া। দোয়া কুনুত পড়ে পূর্বের ন্যায় রুকু, সিজদার পর শেষ তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাছুরা পড়ে ছালাম ফিরানোর মাধ্যমে বিতরের নামাজ সমাপ্ত করতে হয়।

সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও সূরা

সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও সূরা
নামাজের নিয়ম ও সূরা

তাসবিহ অর্থ আল্লাহর নাম স্মরণ করা বা জিকির করা। সলাতুত তাসবিহ অর্থ তাসবিহ পাঠের নামাজ। এ নামাজে ৩০০ বার একটি তাসবিহ পাঠ করতে হয়। তাই এ নামাজ কে সলাতুত তাসবিহ নামাজ বলা হয়। এ নামাজটি নফল। জীবনে একবার হলেও সালাতুস তাসবিহ নামাজ আদায় করতে বলেছেন রাসুলুল্লাহ সা.।নফল শব্দের অর্থ অতিরিক্ত। এটি ফরজের মতো আবশ্যক নয়। তবে আদায়ে সওয়াব ও আল্লাহ নৈকট্য অর্জন হয়। নফল নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। রাসুল সা. বেশি করে নফল নামাজ আদায় করতেন। সাহাবাদের উৎসাহিত করতেন।নবীজি সুস্থতা-অসুস্থতা, সফর-নিবাস, নিরাপত্তা-যুদ্ধ সব সময় ফরজের পাশাপাশি যত্নবান ছিলেন নফল নামাজে। উম্মতকেও নফল পড়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। নফল নামাজেই মহান আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্য অর্জন সম্ভব। ফরজে হয়ে যাওয়া ত্রুটির ক্ষতিপূরণ হয় নফলে।

সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম/নামাজের নিয়ম ও সূরা

সালাতুল তাসবিহ নামাজ চার রকাত। নিয়ত স্বাভাবিকভাবে করলেই হবে। ‘আমি চার রাকাত নফল নামাজ সালাতুস তাসবিহ পড়ছি’। প্রতি রকাতে সুরা ফাতিহার পর যে কোনো সুরা পড়তে হবে। তবে এই নামাজে প্রতি রাকাতে ৭৫ বার করে, চার রকাতে ৩০০ বার তাসবিহ পড়তে হয়।

সালাতুল তাসবিহ নামাজের সূরা

سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ للهِ، وَلَا إلَهَ إلّا اللهُ، وَاللهُ أكْبَر

উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।’ অর্থ: মহা পবিত্র আল্লাহ। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ সবার চেয়ে বড়।

প্রথম রাকাত এ সানা পড়ার পর তাসবিহ ১৫ বার পড়তে হবে। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে সুরা ফাতিহা ও অন্য আরেকটি সুরা পড়ার পর তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ পড়ার পর তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। রুকু থেকে দাঁড়িয়ে ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ পড়ার পর তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ পড়ার পর তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। প্রথম সিজদা থেকে বসে তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। আবার সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহর পর তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। এভাবে প্রতি রাকাতে মোট ৭৫ বার এ তাসবিহ পাঠ করতে হবে। একইভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত পড়তে হবে। (তিরমিজি হাদিস ৪৮১, আবু দাউদ হাদিস ১২৯৭, ইবনু মাজাহ হাদিস ১৩৮৬, ১৩৮৭, মুসতাদরাক হাকিম ১/৪৬৩-৪৬৪, ইবনু খুযাইমা ২/২৩-২৪, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/২৮১-২৮৩, তারগিব ১/৩৫৩-৩৫৫)

এভাবেই এ নফল নামাজ সম্পন্ন করতে হবে। সালাতুস তাসবিহ পড়ে জুমার রাতে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা ফেরান না। এটা পরীক্ষিত আমল।

Leave a Comment